স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশীটভুক্ত দুই আসামী পেলেন চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে উপজেলা ও জেলা জুড়ে। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে তাদের মনোনয়ন বাতিল করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশীটভুক্ত ২২৮ আসামীর মধ্যে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত দুই আসামীরা হলেন- উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি ও নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম। দুজনই গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাচনী বোর্ড থেকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নাসিরনগর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায়, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে আবুল হাসেম, হরিপুর ইউনিয়নে দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি, গুণিয়াউক ইউনিয়নে জিতু মিয়া, ভলাকুট ইউনিয়নে মোঃ রুবেল মিয়া, গোকর্ণ ইউনিয়নে ছোয়াব আহমেদ হৃতুল, কুণ্ডা ইউনিয়নে মোঃ ওয়াছ আলী, পূর্বভাগ ইউনিয়নে মোঃ আকতার মিয়া, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে এটিএম মোজাম্মেল হক,ধরমণ্ডল ইউনিয়নে মোঃ বাহার উদ্দিন চৌধুরী, চাপড়তলা ইউনিয়নে মনসুর আলী ভুইয়া,চাতলপাড় ইউনিয়নে শেখ আব্দুল আহাদ, ফান্দাউক ইউনিয়নে মোঃ ফারুকুজ্জামান ফারুক ও গোয়ালনগর ইউনিয়নে মোঃ কিরণ মিয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার এ গণমাধ্যমকে জানান, মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশের পর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতর্কিত দুজনকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করায় জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডকে তাদের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কেন্দ্র থেকেও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তাদের মনোনয়ন বাতিল করে আগামীকালের মধ্যে নতুনভাবে মনোনয়ন দিয়ে তা প্রকাশ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৬ ইং সনের ৩০ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ টি মন্দিরসহ শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যে ঘটনাটি পুরো দেশসহ বহির্বিশ্বেও ব্যাপক সমালোচিত হয়। এ ঘটনায় নাসিরনগর গৌর মন্দির কমিটির সাধারন সম্পাদক নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে আড়াই হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটির দীর্ঘ সময় তদন্ত শেষে গত ২০১৭ ইং সনের ১০ ডিসেম্বর ২২৮ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে (চার্জশীটে) হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি ও নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের নাম রয়েছে। যদিও তারা দুজন আদালত থেকে জামিনে আছেন।

ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।